উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকে রেহাই পাওয়া এবং সুখি হওয়ার আরেকটি উপায় হলো দুশ্চিন্তার কারণগুলোকে দূর করার চেষ্টা করা এবং যা কিছু সুখ বয়ে আনে তা অর্জনের চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে অতীতের পীড়াদায়ক ঘটনাগুলোকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে অতীতকে ভেবে দুঃখ পাওয়া সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। তাই এসব বিষয়ে ভাবনা চিন্তা বাদ দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। ভবিষ্যৎ ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়া একেবারেই অমূলক। কারন ভবিষ্যৎ হল অজ্ঞাত একটি বিষয়। ভবিষ্যতে ভাল হবে, না মন্দ হবে তা কেউই আগাম বলতে পারেনা। বিষয়টি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের হাতেই ন্যাস্ত। আমরা তাঁর বান্দা হিসেবে যা করতে পারি তা হল ভাল কিছুর জন্য চেষ্টা করা আর মন্দকে দূরে সরিয়ে রাখা। অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে যদি নিজ প্রতিপালকের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস এবং আস্থা রেখে অবস্থার উন্নয়নে চেষ্টা করা হয় তাহলে মনে প্রশান্তি বিরাজ করবে এবং উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
* দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে চান ? সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হল ভালমন্দের দায়দায়িত্ব সব ছেড়ে দিন সৃষ্টিকর্তার ওপর। যে যার ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তাকে ডাকুন,তাকে নিতে দিন আপনার সব সমস্যার বোঝা। তার উপর অর্পন করম্নন সব দুশ্চিন্তা,নিজেকে ছেড়ে দিন ,তুলে দিন তার হাতে। আর তার সাথে পালন করম্নন উপরোক্ত জিনিস গুলো।
* দুঃচিন্তাকে প্রতিরোধ করার একমাত্র ওষুধ হল,নিজেকে সর্বক্ষন ব্যস্ত রাখা। মনটিকে ফাঁকা হতে দেবেন না।কাজে মগ্নহোন ,কাজে মনোযোগ দিন , কাজ শেষ হলে দেরী না করে আরেকটা কাজ শুরু করুন।এভাবেই ব্যস্থ রাখুন।
* আমরা সমস্যা সম্পর্কে চিন্তা করব বৈকি গবেষনা করব ,কিন্তু দুশ্চিন্তা করব না। দুশ্চিন্তা আসলে অর্থহীন গোলক ধাঁধাঁ ব্যতীত আর কিছুই নয়। কিন্তু চিন্তা গতিশীল সৃষ্টিধর্মী,সুন্দর চিন্তা প্রতিভার বিকাশ ঘটায়,জীবন আলোকিত হয়।
* এক দার্শনিক বলেছেনঃ আগামীর চিন্তা ত্যাগ কর ,কারন আগামীকালই তার ভার নেবে ।আজকের দিনেই করনিয় অনেক আছে। অবশ্যই কালকের চিন্তা করবেন ,কালকের জন্য সাবধানে পরিকল্পনাও করবেন,তবে কোন দুশ্চিন্তা নয়।
* এপিকটোস বলেছেন- শরীর থেকে দুষিত রক্তবের করে দেবার চেয়ে খারাপ চিন্তা বের করে দেয়া খুব বেশী জরম্নরী।
* শপেনহাওয়ার বলেছেনঃ আমাদের কি আছে সে কথা আমরা খুব কম ভাবি কি নেই তা নিয়ে যত দুশ্চিন্তা করি অধিকাংশ সময়।
* আমরা সব সময় দুঃখের হিসাব করি -সুখের হিসাব করি না,আনন্দের হিসাব করি না। সুখে থাকার নিয়ম নীতিও মেনে চলি না। আমাদের উচিৎ দুঃখ কি পরিমান আছে তার হিসাব বাদ দিয়ে সুখ কি পরিমান আছে, আনন্দ কি পরিমান আছে , তার হিসাব কর।
* দুশ্চিন্তা মানুষের মনোনিবেশের ক্ষমতা কেড়ে নেয় , যখন আমরা দুশ্চিন্তা করি তখন কি হয়? মনটা তখন এক জায়গায় থাকে না, নানান বিষয়ের ওপর খাপছাড়া ভাবে উড়ে বেরায় মন,যার ফলে কোন সমস্যা সমাধানের কোন উপায় বের হয় না, এবং হওয়া সম্ভব নয়।
* চরম ক্ষতি কি হতে পারে এটা একবার পরিস্কার জানা হয়ে গেলে এবং সেটা মেনে নিতে পারলে দুশ্চিন্তা বলে কোন জিনিসই থাকে না আর।
* প্রথমত,যেন পুনরায় লোকসানটা না হয় সেজন্য সর্তক হতে হবে,দ্বিতীয়ত,মন থেকে দুঃখটা মুছে যোর উৎফুলস্ন চিত্তে কাজে নামবেন। পুনরায় ক্ষতিগ্রসত্ম না হবার একটা মন্ত্র অমত্মরে গেঁথে ক্ষতি বন্ধ করতে হবে। এজন্য একটু ভাবলেই নাত পথ আপনি খুঁজে পাবেন।
* ক্রইশলার কপোরের্শনের প্রেসিডেন্ট কে,টি,কেলারক বলেছেনঃ যখন কোন কঠিন অবস্থার সামনে পড়ি তখন নিজে কিছু করার থাকলে তা করি,না থাকলে স্রেফ ভুলে যাই। আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না, কারন জানি যে কোন মানুষই ভবিষ্যতের ভাগ্যে কি আছে তা জানতে পারে না। বহু শক্তিই ভবিষ্যৎকে নিয়মত্মন করে।
* এপিক্টেটাস বলেছিলেনঃ সুখ লাভের একটাই পথ আছে আর তা হলো আমাদের ক্ষমতার বাইরে যা আছে তা নিয়ে দুচিন্তা না করা।
* আপনার যদি কোন দুশ্চিন্তা আর সমস্যা থাকে তাহলে উইলিস এইচ,ক্যারিয়রের পরামর্শ কাজে লাগান এই তিনটি কাজ করা চাই।
১। নিজেকে প্রশ্ন করম্নন ,সবচেয়ে খারাপ কি ঘটতে পারে?
২। অবশ্যম্ভাবী যা,তা গ্রহন করতে তৈরি হোন।
৩। তারপর শামত্মভাবে চেষ্টা করম্নন খারাপ অবস্থা থেকে কিভাবে উন্নতি কার যায়।
পরিশেষে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা পরামর্শ দিচ্ছি …
“যে ব্যক্তি আল্লাহ্র উপর নির্ভর করে তার জন্যে আল্লাহ্ই যথেষ্ট” [সূরা আল তালাক; ৫৬:৩]
অর্থাৎ, সেইব্যক্তির পার্থিব এবং আধ্যাত্মিক সকল বিষয়ে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন যথেষ্ট। যে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের প্রতি পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে তার মনোবল বেড়ে যাবে। ফলে অমূলক ভাবনা চিন্তা তাকে বিচলিত করতে পারবেনা। মনে বিভিন্ন দুশ্চিন্তা আসাটা মানুষের প্রকৃতিগত একটি ব্যাপার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। তবে যারা আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের উপর নির্ভর করবে তিনি তাদের জন্য যথেষ্ট হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই বিশ্বাসী ব্যক্তি সবসময় আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের উপর আস্থা রাখেন, তাঁর পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশা করেন। ফলে হৃদয় প্রশান্ত হয়; উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি দূরীভূত হয়; কঠিন সহজ হয়ে যায়; নিরানন্দ হয়ে ওঠে আনন্দময়; অশান্তি পরিণত হয় প্রশান্তিতে। আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন যেন আমাদেরকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখেন; তিনি যেন আমাদেরকে অন্তরের দৃঢ়তা এবং মনের অবিচলতা দান করেন; আমরা যেন পরিপূর্ণভাবে তাকে বিশ্বাস করতে পারি; কারন, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাদের জন্যই উত্তম বিনিময় এবং দুশ্চিন্তাহীন জীবনের ঘোষণা দিয়েছেন যারা তাঁকে পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করবে এবং তাঁর উপরই ভরসা করবে।
যদি খারাপ কিছু ঘটেই যাই কিংবা তেমন কিছু ঘটবার প্রবল আশ্ংকা দেখা দেয়, তাহলে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের যে অসংখ্য নেয়ামাত আপনি ভোগ করছেন সেগুলোর কথা একবার ভাবুন। তাঁর অসংখ্য নেয়ামতের কথা ভাবলে বর্তমানের বিপদকে আর বিপদই মনে হবেনা।
📝 সূত্র : ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত।
আরো তথ্য পেতে ভিজিট করুনঃ h t t p : / / s h . s t / w 3 c y g M