শ্বাসকষ্ট ও খুশখুশে কাশি
থেকে উপসমে তেজপাতার জুড়ি নেই। নিয়ম করে দিনে দুইবার সকাল ও সন্ধা তেজপাতার বিড়ি খেলে
ভালো উপকার পাওয়া যায়। মানব দেহের রেস্পিরেটরি সিস্টেমকে খুব সহজেই পরিষ্কার করে তেজপাতার
বিড়ি। প্রাকৃতিক উপায়ে কাশি, শ্বাসকষ্ট ও গলা ব্যথা কমাতে এটি একটি ঘরোয়া টোটকা।
কাশি সারিয়ে তোলতে তেজপাতার কার্যকারিতা তা অনেকেরই জানা। দ্রুত
কাশি কমাতে ঘরোয়া এই টোটকাটি খুবই কার্যকরি। তেজপাতা খুব সহজেই মানব দেহের রেস্পিরেটরি
সিস্টেমকে পরিষ্কার করতে সক্ষম। সর্দি ও কাশিকে খুব দ্রুত সারিয়ে তুলার ক্ষমতা তেজপাতায়
রয়েছে। ৪ - ৫টি তেজপাতা পানিতে ফুটিয়ে সামান্য ঠাণ্ডা করে খেতে পারেন। তেজপাতা ফুটানো
পানিতে একটি কাপড় ভিজিয়ে বুকে সেঁকও দিতে পারেন। এছাড়াও আপনি যদি তেজপাতার বিড়ি বানিয়ে
খেতে পারেন তাহলেও অসাধাণ উপকার পাবেন।
দুটি তেজপাতা একটির উপর আরেকটি রেখে বিড়ির মত করে সরু করে মুড়িয়ে
ফেলুন। এবার একটি সুতো দিয়ে গোড়ার দিকে বেঁধে নিন। এবার বিড়ির মত করে রোল করা তেজপাতাটির
মাথায় আগুন ধরিয়ে তারপর নিভিয়ে দিন। এরপর গোড়ার দিকটি মুখের মধ্যে লাগিয়ে বিড়ির মতো
করে মনের আনন্দে টানতে থাকুন। তারপর দেখবেন তেজপাতার বিড়ি আপনার কাশি তাড়াতে ম্যাজিকের
মত কাজ করছে।
তেজপাতা একটি সুগন্ধিযুক্ত পাতা হওয়ায় এটি বিভিন্ন সু-স্বাদু খাবারের
সুগন্ধ বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া তেজপাতা সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথার উপসম করা
ছাড়াও এতে রয়েছে বহু ঔষধি গুন।
তেজপাতার ঔষধি গুণ সম্পর্কে
নিম্নে আলোচনা করা হলো -
চুলের বৃদ্ধি ও খুশকি তাড়াতে
-
চুলের যত্নে তেজপাতা খুবই কার্যকরী। কয়েকটি তেজপাতা পানিতে সিদ্ধ
করে তারপর ঠান্ডা করে নিন। তারপর তেজপাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে মাথার চুল ও স্কাল্প ধুয়ে
নিন। শ্যাম্পু করার পর এ কাজটি করবেন। খুশকির যন্ত্রনা কমাতে তেজপাতা বেটে নারিকেল
তেলের সাথে মিশিয়ে তা ৩০ মিনিট স্কাল্পে লাগিয়ে
রাখুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে
ফেলুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে -
গবেষণা মতে, দিনে দু’বার তেজপাতা খেলে তা রক্তে শর্করার পরিমাণ
কমাতে ভূমিকা রাখে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরী।
হজমে সাহায্য করে -
তেজপাতা স্বাভাবিক হজমশক্তি ফিরিয়ে এনে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তেজপাতা
মানব দেহের দূষিত টক্সিন বের করে দেয়। ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দূর করে ও পিত্ত রস
বৃদ্ধিতে কাজ করে তেজপাতা। দ্রুত খাবার ভাঙতে কাজ করে তেজপাতায় থাকা এনজাইম।
হার্টের ভালো রাখতে -
তেজপাতায় রুটিন ও ক্যাফেক অ্যাসিড থাকায় তা হার্টকে শক্তিশালী করে
ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। আমাদের শরীরে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকলে তা হার্ট
অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
ব্যথা উপশমে -
সাধারণ মাথা ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা ও বাতের ব্যথা উপশমে তেজপাতা
খুবই কার্যকরী। আক্রান্ত স্থানে তেজপাতা ও রেড়ির পাতার একসাথে পেস্ট তৈরী করে লাগিয়ে
২০ মিনিট রাখলেই ব্যথা কমে যাবে। এছাড়াও তেজপাতার তেল মাথায় ম্যাসাজ করলে ব্যথা কমে
যাবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে -
গবেষণা মতে, তেজপাতা মানব
শরীরের ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে তেজপাতায়
থাকা ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান কাজ করে। এটি ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও
ভালো কাজ করে।
ক্ষত নিরাময়ে -
ক্ষত সারাতে চমৎকার কাজ করে
তেজপাতায় থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এছাড়াও এটি
ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমণ রোধেও কাজ করে।
কিডনির চিকিৎসায় -
মানব শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে এটি কিডনি ও গ্যাসের সমস্যা
সৃষ্টি করে। গবেষণা মতে, তেজপাতা আমাদের শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ কমাতে কাজ করে। ফলে নিয়মিত
তেজপাতা খেলে তা গ্যাস ও কিডনির সমস্যা সমাধান করতে ভূমিকা রাখবে।
উদ্বিগ্নতা ও মানসিক চাপ
কমাতে -
উদ্বিগ্নতা ও মানসিক চাপ কমাতে তেজপাতা খুবই ভালে কাজ করে। যদি
মনে হয় যে, আপনার মুড ঠিক নেই, তাহলে এক কাপ তেজপাতার চা খেয়ে নিন। আপনার স্নায়ু শান্ত
করতে ও উদ্বিগ্নতা কমাতে এটি খুব ভালো কাজ করবে। ইহা ঘুমের সমস্যা দূর করতেও কাজ করে।
শেষ কথা -
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। প্রত্যেক জিনিসের
উপকারের পাশাপাশি কিছু বিধি নিষেধও থাকে। তাই, তেজপাতা গর্ভবতী মা ও সদ্য মায়েদের না
খাওয়াই ভালো। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। তেজপাতার বিড়ি শিশুদের কাশি
কমাতে ব্যবহার করবেন না। ধন্যবাদ।
পোস্ট ট্যাগ -
বিড়ি খেলে কি ক্ষতি হয়, তেজ পাতার বিড়ি, টয়লেটে বসে সিগারেট
খেলে কি হয়, তেজপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, খালি পেটে বিড়ি খেলে কি হয়, কোন সিগারেট
খেলে ক্ষতি হয় না, সিগারেট খেলে কি উপকার হয়, ধূমপান করলে কি কি ক্ষতি হয়, বিড়ি
খেলে কি ক্যান্সার হয়?, খালি পেটে সিগারেট খেলে কি হয়