দিন দিন আমাদের চারপাশের পারিপার্শিক অবস্থা জটিল হয়ে উঠছে। আগের
মত আমাদের সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় নেই। কাজের পরিধি বেড়েছে কিন্তু সে হারে মাইনে বাড়েনি।
সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা সব সময় মানসিক চাপে থাকি। ফলে আমাদের মধ্য থেকে হাসি পালিয়ে
যাচ্ছে অপরদিকে স্ট্রেসের মাত্রা বেড়েই চলেছে। আমাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার সাথে
হাসির সম্পর্ক অতি নিবিড়।
আমরা সবাই হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখতে পছন্দ করি। হাসি একটি প্রাকৃতিক
শ্রেষ্ট ওষুধ। হাসি আমাদের মনের বর্তমান অবস্থান থেকে আবেগকে স্পর্শ করে ও তা প্রকাশ
করে। হাসি অন্যকে প্রভাবিত করে, যেমন আপনি মন খুলে হাসছেন, আপনার এই হাসি যাদের নজরে
আসবে তারাও হাসতে বাধ্য। এক জনের হাসি তাৎক্ষণিক ভাবেই আরেক জনের মুখে হাসি ফোটাতে
সক্ষম। হাসির এই সাময়িক উপকারিতার পাশাপাশি
দীর্ঘমেয়াদি উপকারও রয়েছে।
গবেষণা মতে, আমাদের শরীর গঠনে ভূমিকা রাখে হাসি। হাসির মাধ্যমেই
স্ট্রেসের মাত্রা কমানো সম্ভব। ফলে হ্রাস পাবে নানা রোগের ঝুকি। মনকে চাঙা ও শরীরকে
সুস্থ রাখতে হাসির বিকল্প নেই।
হাসির অসাধারণ কিছু উপকারিতা
নিম্নে দেওয়া হলো -
১। টি-সেলের ক্ষমতা বাড়ায়
-
টি-সেলের শক্তি যত বৃদ্ধি
পাবে, শরীর তত শক্তিশালী হবে। ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি কমে যাবে। আর বিশেষ
এই কোষটির ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো প্রাণ খুলে হাসা।
২। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো
রাখতে -
যখন আপনার মনে রাগ, হতাশা ও দুঃখ দেখা দেবে, তখন এমন কিছু করুন
যাতে মন খুলে হাসতে পারেন। কারণ, মন যখন বিষন্ন থাকে তখন মানসিক চাপ কমাতে হাসিই একমাত্র
সমাধান।
৩। মন ভাল করতে -
আমাদের শরীরে এন্ডোরফিন ও সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করতে
প্রান খুলে হাসুন। শরীরে এই হরমোনের ক্ষরণের ফলে মুহুর্তেই আমাদের মন ভাল হয়ে যায়।
মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণাও উধাও হয়ে যায়। এই হরমোন ২টি কে চিকিৎসকেরা ‘গুড ফিল’ হরমোন
মনে করেন।
৪। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধিতে -
হাসার ফলে আমাদের শরীরে ‘গুড ফিল’ হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। এই
হরমোনগুলি আমাদের শরীরে শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা অতি শক্তিশালী হয়ে উঠে। শরীরে ইমিউন
সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে শরীরে জটিল ও কঠিন ব্যাধিতেও আক্রান্ত
হওয়ার ঝুকি অনেক কমে যায়।
৫। ফুসফুস -
হাসার সময় আমাদের ফুসফুস প্রসারিত হয় এবং ফুসফুস বিশুদ্ধ অক্সিজেনে
ভরপুর হয়ে যায়। ফলে ফুসফুস থেকে সারা শরীরে
অক্সিজেন ছড়িয়ে পড়ে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুসফুসের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি
পায় ও শরীরে নানা রোগের ঝুকি হ্রাস পায়।
৬। রক্তচাপ কমাতে -
শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে হাসি। হাসার ফলে রক্তনালীগুলি প্রসারিত
হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই শিরা-উপ-শিরায় চাপ কমে।
তাই মন খুলে হাসলে খুব দ্রুত উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়।
৭। হাসি এক ধরণের ব্যায়ামও
বটে -
মন খুলে খিল খিল করে হাসার সময় শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন
হতে থাকে। হাসার সময় পেটেও চাপ পড়ে। হাসির মাধ্যমে ওজন হ্রাসের সম্ভাবনা তৈরী হয়। গবেষণায়
দেখা গেছে, একটানা ১০ মিনিট নৌকা কিংবা ১৫
মিনিট সাইকেল চালালে যে পরিমাণ ক্যালরী খরচ হয় তা ১০০ বার হাসিতে বার্ন হওয়া ক্যালরীর
সমান। এছাড়াও হাসিতে পেট, মূখ ও শরীরের অন্যান্য অংশ সমূহের মাংসপেশির চমৎকার এক্সারসাইজ
হয়।
৮। শরীর শান্ত করতে -
গবেষণা মতে, একবার প্রাণ খুলে হাসার প্রভাব আমাদের শরীরে প্রায়
৩০-৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। দেহের ক্লান্তি ও মনের স্ট্রেস মুহূর্তেই কমে যায়,
যখন আমরা মন খুলে হাসতে থাকি।
৯। হার্ট ভালো রাখতে -
মন খুলে হাসলে আমাদের দেহের রক্তনালীগুলি প্রসারিত হয়। ফলে রক্তচাপ
কমে যায় এবং হার্টের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। মন খুলে হাসার ফলে সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন
বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে। যারা মন খুলে হাসেন তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কম থাকে।
১০। স্ট্রেস কমাতে -
হাসি আমাদের শরীরে এন্ডোরফিন ও সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি
করে, এই হরমোনকে স্ট্রেস হরমোন হিসেবে ধরা হয়। শরীরে এই হরমোনের বৃদ্ধি পেলে স্ট্রেস
কমে যায়। হাসির জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিন দেখবেন আপনার স্ট্রেস কখন পালিয়েছে তা বুঝতেও
পারবেন না।
শেষ কথা -
আজকের আর্টিকেলে প্রান খুলে হাসার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা
করেছি। একটি বিষয় মনে রাখা জরুরী, প্রাণ খুলে মনের আনন্দে হাসতে হবে। মুচকি হাসি বা
জোর করে তৈরী করা হাসিতে কিন্তু কাজ হবে না। তাই আসুন আমরা আমাদের জীবনকে সুস্থ, সুন্দর
ও আনন্দময় করে তুলি।
পোস্ট ট্যাগ -
মুচকি হাসির উপকারিতা, বেশি হাসলে কি হয়, মন খুলে হাসার উপায়,
বেশি হাসলে কি হয় ইসলাম কি বলে, হাসি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, হাসি নিয়ে ক্যাপশন,
হাসি কি, হাসি নিয়ে উক্তি