যন্ত্রণাদায়ক একটি পতঙ্গ হচ্ছে মশা। দিনে ও রাতে আমাদের বিরক্তিকর
উপদ্রব করার পাশাপাশি রোগ জীবাণু ছড়ায়। মশার মাধ্যমে রোগ জীবাণু ছড়ানোর মাধ্যমে অনেকেই
বিভিন্ন রোগে সংক্রমিত হয়ে থাকে। যেমন- চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া,
পীত জ্বর, জিকা ভাইরাসসহ বিভিন্ন প্রানঘাতি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে
সংক্রমিত ব্যক্তি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মশা তাড়ানোর অনেক পদ্ধতি রয়েছে, যেমন- স্প্রে,
কয়েল, অ্যারোসল ইত্যাদি ব্যবহার করে। এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে মশা সাময়িকভাবে তাড়ানো
গেলেও তা ব্যয়বহুল ও চরম স্বাস্থ্য ঝুকি তৈরী করে। আজ মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক ও সম্পুর্ণ
নিরাপদ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।
মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক
কার্যকরি উপায়গুলো নিম্নরুপ -
১. লেবুর সাথে লবঙ্গের
ব্যবহার -
প্রথমে একটি লেবুকে গোল করে কেটে নিতে হবে। তারপর লেবুর ভেতরের
অংশে কয়েকটি লবঙ্গের মাথার অংশটুকু বাহিরে রেখে বাকিটুকু গেঁথে দিন। এরপর একটি প্লেটে
লেবুর টুকরাগুলো ঘরের যে অংশে মশার উপদ্রব বেশি সেখানে রেখে দিন। এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিটি
ব্যবহার করে আপনি বেশ কয়েকদিন মশার যন্ত্রণা থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন।
২. নিমের তেল ব্যবহার করে
-
নিমের মাঝে মশা তাড়ানোর একটি প্রাকৃতিক গুণ রয়েছে। ত্বকের সুস্থ্যতায়
নিমের তেল বেশ উপকারি। মশা থেকে বাঁচতে নিমের তেল ও সমপরিমান নারিকেল তেল মিশিয়ে সারা
শরীরে লাগিয়ে নিন। ফলে ত্বকের অ্যালার্জি, ইনফেকশন জনিত নানা সমস্যা ও মশার যন্ত্রনা
থেকে নিরাপদ থাকবেন।
৩. পুদিনা গাছের ব্যবহার
-
একটি পাত্রে পানি ভর্তি করে৫-৬ টি পুদিনা গাছ রেখে দিন ঘরের সুবিধাজনক
স্থানে। প্রতি ৩দিনে ১দিন পানি পরিবর্তন করতে হবে। গবেষণা মতে, পুদিনা পাতার অন্যান্য পোকামাকড়ের পাশাপাশি মশা দূর
করার ক্ষমতা রয়েছে। পুদিনার পাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানির ভাপ সারা ঘরে ছড়িয়ে দিতে
পারেন। এছাড়াও পুদিনার তেলও সারা শরীরে লাগাতে পারেন।
৪. লেমন গ্রাস লাগান -
থাই লেমন গ্রাসে সাইট্রোনেলা
অয়েল নামক উপাদান রয়েছে যা থেকে এক বিশেষ ধরনের সুগন্ধ বের হয়। এই সুগন্ধ ছড়ালে মশারা
পালাতে বাধ্য। এছাড়াও এটি সৌন্দর্য বর্ধনেও ভূমিকা রাখে।
৫. ধুনো, নিশিন্দা ও নিমপাতার
গুঁড়ো -
প্রতিদিন নিয়ম করে ধুনোর সঙ্গে নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়ো ব্যবহার
করলে মশার যন্ত্রনো থেকে মুক্তি মিলবে।
৬. হলুদ বৈদ্যুতিক আলো
-
মশা হলুদ আলো থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। তাই আপনার ঘরে মশার উপদ্রব
কমাতে চাইলে হলুদ আলোর লাইট ব্যবহার করতে পারেন। সন্ধ্যাবেলায় ঘরে হলুদ বাগ লাইট বা
সোডিয়াম লাইট জ্বালালে ঘরে বাইরে মশাদের উপদ্রব অনেকটাই কমে যাবে।
৭. চা-পাতা -
চা তৈরী করার পর ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে তা রোদে শুকিয়ে নিন।
তারপর শুকনো চা পাতা পুড়িয়ে তা থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া সারা ঘরে ছড়িয়ে দিন। মশা তাড়ানোর
এটি একটি কার্যকরি পদ্ধতি।
৮. নিমপাতা -
আগুনে শুকনো নিমপাতা পোড়ানোর ফলে যে ধোঁয়া তৈরী হয় তা সারা ঘরে
ছড়িয়ে দিলে মশা দূর হয়ে যাবে।
৯. ক্যাটনিপ অয়েল -
ক্যাটনিপ অয়েলে nepetalactone নামক উপাদান থাকায় তা মশা তাড়াতে
DEET (Diethyle-Meta-toluamide) এর থেকে প্রায় ১০ গুন বেশি কার্যকরি। এছাড়াও ক্যাটনিপ
অয়েল সারা শরীরে মাখালে মশা দূরে থাকবে।
১০. চামচিকার বাক্স -
কি ভয় পাচ্ছেন ? ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। চামচিকারা প্রতি ঘন্টায়
শতাধিক পোকা-মাকড় খেয়ে ফেলে। তাই মশা তাড়াতে আপনার বারান্দাকে ব্যাট হাউস বানিয়ে ফেলতে পারেন।
১১. দ্রুত গতিতে ফ্যান চালান -
মশাদের ওজন খুবই কম। মশাদের ওজন ও উড়ার গতির বিবেচনায় চেয়ে ফ্যানের
বাতাসের গতি বেশি হলে সহজেই মশাদের ফ্যানের
ব্লেডের কাছে টেনে নেয়। তাই মশাদের উপদ্রব থেকে বাঁচতে আপনার ঘরের ফ্যানটি দ্রুত গতিতে
চালান।
১২. কাপড়ের রং নির্বাচন
-
মশাদের পছন্দের কালারের কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাকুন। কিছু প্রজাতির
মশা নির্দিষ্ট কয়েকটি কালারের প্রতি আকৃষ্ট থাকে, যেমন গাঢ় কালো, গাঢ় নীল আর গাঢ় লাল।
১৩. কর্পূর ব্যবহার করুন
-
কর্পূরের গন্ধ মশাদের জন্য একেবারেই অস্বস্থিকর। একটি ছোট বাটিতে কর্পূরের ৫০ গ্রামের ট্যাবলেট রেখে
তা পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। তারপর কর্পূর যুক্ত পানিওয়ালা বাটিটি ঘরের কোণে রেখে দিন।
প্রতি দুই দিনে একবার পানি পরিবর্তন করুন। ব্যবহৃত পানিটি ঘর মোছার কাজে ব্যবহার করলে
পিঁপড়ার উপদ্রব থেকে মুক্তি মিলবে।
১৪. সুগন্ধি ব্যবহার করুন
-
শরীরে যে কোন ধরনে সুগন্ধি বা লোসন ব্যবহার করে ঘুমাতে গেলে মশার
উপদ্রব কম হবে।
১৫. রসুনের স্প্রে -
একটি বাটিতে সামান্য পানি নিয়ে তার সাথে পানির ৫ ভাগের ১ ভাগ রসুনের
রস মেশান। এবার এই মিশ্রণটি শরীরে ও রুমে স্প্রে করুন। এতে মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি মিলবে।
১৬. পানি জমিয়ে রাখবেন
না -
ঘরের আনাচে-কানাচে বা বারান্দার টবে কিংবা আঙ্গীনায় কোথাও পানি
জমে থাকলে সেখানে মশার জন্ম হতে পারে। তাই মশার বংশবিস্তার রোধ করতে জমানো পানি প্রতি
৩ দিনে ১ দিন পরিবর্তন করুন।
১৭. নারিকেলের আঁশ -
নারিকেলের আঁশ ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। তারপর তা টোকরো করে তাতে আগুন
ধরিয়ে দিন। এতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মশা দূর হয়ে যাবে।
১৮. কেরোসিন তেল স্প্রে
করুন -
কেরোসিন তেলে কয়েক টুকরো কর্পূর মিশিয়ে তা একটি স্প্রে বোতলে নিন।
তারপর বোতলটি ভালো করে ঝাঁকিয়ে রুমে স্প্রে করুন । এতে মশা দূর হয়ে যাবে।
পোস্ট ট্যাগ -
মশা মারার ঔষধের নাম, তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়, কর্পূর
দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়, গোয়াল ঘরের মশা তাড়ানোর উপায়, মশা তাড়ানোর স্প্রে, রসুন
দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়, মশা মারার ঘরোয়া উপায়, মশার স্প্রে ব্যবহারের নিয়ম