এক সময় স্মার্টফোন ছিল বিনোদন ও সৌখিনতার প্রতীক। বর্তমানে স্মার্টফোন
কোন বিনোদন বা সৌখিনতা নয় বরং এটি আমাদের প্রয়োজন ও দৈনৈন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তথ্য ও প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমান বিশ্ব অনেকদূর এগিয়েছে। এখন অধিকাংশ কাজ কর্ম অনলাইনেই
সম্পাদন করা যায়। ঘরে বসে আপনার হাতের স্মার্টফোনটি ব্যবহার করেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ
কর্ম সম্পাদন করা সম্ভব। এক কথায় বলা যায় বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়।
প্রযুক্তি বান্ধব বিশ্বে স্মার্টফোনের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত
নিম্নে দেওয়া হলো -
১) যোগাযোগ মাধ্যম -
যোগাযোগের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোন ব্যবহার
করে সহজেই বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের খোজ-খবর নেওয়া যায়। বর্তমানে স্মার্টফোনে
উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে উন্নত মানের voice calling ও live video calling সুবিধা
পাওয়া যায়। ফলে অপর প্রান্তে থাকা প্রিয়জনের সাথে কথা বলার পাশাপাশি দেখাও যায়।
২) খবর -
সর্বদা বর্তমান বিশ্বের নানা হালচাল জানতে স্মার্টফোন একটি সেরা
মাধ্যম। বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পেপার, news apps
ও YouTube news channel ইত্যাদি মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে তাজা খবরের সাথে
নিজেকে সর্বদা আপডেট রাখতে স্মাটফোনের জুডি নেই।
৩) ছোট এবং সুবিধাজনক -
স্মার্টফোনের আকার ছোট হওয়ায় তা সহজেই বহন করা যায়। রিচার্জেবল
ব্যটারি বিল্ট ইন থাকায় দিনে একবার চার্জ করেই অনায়াসে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করা যায়।
৪) ছবি এবং ভিডিও : -
বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহার করেই উন্নত মানের যে কোন ডকুমেন্টারী
তৈরী করা সম্ভব। একটি ভালো মানের স্মার্টফোনের ছবি ও ভিড়িও কোয়ালিটি এতটাই উন্নত যে,
কোন কোন ক্ষেত্রে আপনাকে DSLR camera ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকেও ভুলিয়ে দেবে। প্রফেশনাল
ছবি, ভিড়িও রেকর্ড থেকে এডির্টিং পর্যন্ত সব কিছুই এখন স্মার্টফোনেই সম্ভব।
৫) জিপিএস (GPS) -
আপনার অজানা পথের বিশ্বস্থ সঙ্গী আপনার স্মার্টফোনের জিপিএস
(GPS) । স্মার্টফোনের জিপিএস সুবিধার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের রাস্তা-ঘাট,
হোটেল, শপিং মল ইত্যাদি খুঁজে পাওয়া যায়। Google maps এপসটি আপনার স্মার্টফোনে বিল্ট
ইন দেওয়া থাকে। GPS এর মাধ্যমে আপনার কাংখিত লোকেশন (location) বা রাস্তা খুঁজে পেতে
একজন বিশ্বস্থ গাইড হিসেবে সাহায্য করে।
৬) মাল্টি টাস্কিং -
স্মার্টফোনকে আপনি আপনার কম্পিউটারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে
পারবেন। বর্তমানে স্মার্টফোন গুলিতে শক্তিশালী Processor , RAM, ROM এবং GPU থাকে। ফলে স্মার্টফোন ব্যবহার
করেই জটিল কাজগুলোর পাশাপাশি টেক্সট করা, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা ও ইন্টারনেট
ব্যবহার ইত্যাদি কাজগুলি সমান্তরাল ভাবে করতে পারবেন।
৭) ইন্টারনেট -
বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষই স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের পাশাপাশি অনলাইনে চ্যার্টিং, শপিং,
ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, ভিডিও কলিং , মুভি দেখা সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন।
৮) ভিডিও কলিং -
বর্তমানে স্মার্টফোন গুলিতে ফ্রন্ট এবং ব্যাক দুটো ক্যামেরাই ব্যবহার
করা হয়। ব্যাক ক্যামেরার তুলনায় ফ্রন্ট ক্যামেরা ব্যবহার করে ভিড়িও কলিং সুবিধা ভালো
ভাবে পাওয়া যায়। live video calling এর মাধ্যমে
প্রিয়জনের সাথে video chatting এর সুবিধা পাওয়া যায়।
৯) মোবাইল ব্যাংকি -
আপনার স্মার্টফোন অথবা বাটন ফোন ব্যবহার করেই মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা
পাওয়া সম্ভব। স্মার্টফোনে নির্দিষ্টি ব্যাংকের অ্যাপস ব্যবহার করে আপনার ব্যাংক একাউন্ট
থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার, রিসিভ, ডেবিট কার্ড ও চেক বই এপ্লাই সহ প্রায় সব
কাজই করা সম্ভব।
১০) টর্চ লাইট (Flash
light) -
বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক মোবাইলে টর্চ ফ্ল্যাশ লাইট ব্যবহারের সুবিধা
দেওয়া থাকে। ফলে আলাদা টর্চ লাইট বহনের ঝামেলা এড়িয়ে অন্ধকারে পথ চলতে সাহায্য করে।
১১) টেক্সট এবং নোট -
এক সময় জরুরী নোট রাখার জন্য ডায়েরী বহন করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে
স্মার্টফোন ব্যবহার করেই বিভিন্ন হিসাব, তালিকা, নোট, আর্টিকেল, এক্সেল , ওয়ার্ড ফাইল
এডিট ইত্যাদি কাজ করা যায়।
১২) লাইভ টিভি -
এক সময় নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বসে টিভি দেখতে হতো। কিন্তু প্রযুক্তির
কল্যাণে এখন দিন বদলে গেছে। আর আপনাকে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বসে প্রয়োজনীয় সময় নষ্ট
করে টিভি দেখতে হবে না। প্রয়োজনে দূরের কোন গন্তব্যে যাওয়ার পথে যানবাহনে বসেই আপনার
smartphone এর পর্দায় হাই ডেফিনেশনে টিভি উপভোগ করতে পারবেন।
১৩) শিক্ষা ও গবেষণা -
স্মার্টফোন শিক্ষা ও গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আপনি কোন
কিছু জানার প্রয়োজন মনে করলেই আপনার স্মার্টফোনটি ব্যবহার করে গুগলে সার্চ করতে পারেন।
গুগলের বিশাল তথ্য ভান্ডার থেকে পেয়ে যাবেন আপনার কাংঙ্খিত উত্তর। বিভিন্ন ইনস্টিটিউট,
স্কুল, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইভ ভিডিও কলিং ক্লাসে আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করেই
যুক্তি হতে পারেন। কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষাও নিচ্ছে।
১৪) অনলাইনে আয় -
ঘরে বসে আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস এর
পাশাপাশি ইউটিউব মার্কেটিং, ব্লগিং, সিপিএ মার্কেটিং, ডাটা এন্ট্রি সহ বিভিন্ন কাজ
করে টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
১৫) এপ্লিকেশন (apps) -
আপনার দৈনৈন্দিন প্রয়োজন অনুযায়ী স্মার্টফোনে বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার
করতে পারবেন। কম্পিউটার ব্যবহার করে ওয়েব সাইট থেকে কোন কাজ করার তুলনায় মোবাইলে অ্যাপস
ব্যবহার করে কাজ সম্পাদন করা সহজ।
১৬) অনলাইন শপিং -
যানজট ও সময় বাচাতে অনেকেই ঘরে বসে অনলাইনে শপিং করতে পছন্দ করেন।
স্মার্টফোন ব্যবহার করেই আপনার পছন্দের ই-কমার্স সাইট থেকে কাংঙ্খিত পন্য অর্ডার করতে
পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন বিল পে আপনার স্মার্টফোন থেকেই করা সম্ভব। যেমন -মিটার রিচার্জ,
কেনাকাটার বিল পেমেন্ট, ইলেক্ট্রিসিটি বিল,
পানির বিল সহ বিভিন্ন পেমেন্ট স্মার্টফোন থেকে
খুব সহজেই করা যায়।
১৭) রিমোট ওয়ার্কিং
(Remote working) : -
রিমোট ওয়ার্কিং এর মাধ্যমে আপনার বাসাকেই অফিস বানিয়ে ফেলতে পারেন।
অফিসের যাবতীয় কাজ র্ম স্মার্টফোনের মাধ্যমে বাড়ীতে বসেই করা সম্ভব।
শেষ কথা -
স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয়তা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা
করেছি। প্রযুক্তির এই যুগে নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে স্মার্টফোন একটি হাতিয়ার
হিসেবে কাজ করে। আমরা যদি প্রযুক্তির এই গুরুত্বপূর্ণ
আবিস্কারকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলে
আমরা ব্যাক্তি জীবনে উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে
বলে মনে করি। ধন্যবাদ।
পোস্ট ট্যাগ -
স্মার্ট ফোনের সুবিধা ও অসুবিধা, স্মার্টফোন ব্যবহারের অসুবিধা,
মোবাইল ফোন এর সুবিধা, ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা, মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর
দিকগুলো, মোবাইল ফোনের সুবিধা ও অসুবিধা রচনা, স্মার্টফোনের ব্যবহার, মোবাইল ফোনের
উপকারিতা বিতর্ক প্রতিযোগিতা