তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে আমাদের জীবনযাত্রা পরিবর্তীত
হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় মানুষের কর্মক্ষেত্রে হানা দিচ্ছে রোবটিক্স প্রযুক্তি। একজন
কর্মী যে সকল কাজ করে তা অনেক কম সময়ে রোবট তা করতে পারে। আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে
রোবটিক্স কি? কত প্রকার? এর সুবিধা ও অসুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো ইনশা-আল্লাহ।
রোবটিক্স কী?
রোবটিক্স হচ্ছে এমন একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা, যা দেখলে মনে হবে
যে, তার কাজকর্ম, চলাফেরা স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতা সম্পন্ন। প্রকৃত পক্ষে রোবট কাজ করে কম্পিউটার
প্রোগ্রামের সাহায্যে। যে প্রোগ্রামের নিয়ন্ত্রন মানুষের হাতেই। বিজ্ঞানের যে বিভাগে
রোবট উৎপাদন ও গবেষণা সংক্রান্ত কাজ করা হয়, সেটি হচ্ছে রোবটিক্স জগত।
রোবটের প্রকারভেদ -
ছোট - বড় সব রোবটেরই ভিন্নতা রয়েছে। যে কারনে রোবটের প্রকারভেদ
নির্দিষ্ট করা জটিল। ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ঠের উপর ভিত্তি করে রোবটকে কয়েকটি ভাগে ভাগ
করা হয়ে থাকে।
১. অটোনমাস মোবাইল রোবট
-
প্রোগ্রামিং নির্দেশনা পাওয়ার পর সরাসরি মানুষের হাতের সাহায্য
ছাড়াই বিরতিহীনভাবে সু-নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে পারা রোবটগুলো হলো অটোনমাস মোবাইল
রোবট। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভারী জিনিস ওঠা-নামা করাতে, প্যাকিং, ড্রিলিং এবং ওয়েল্ডিংয়ের
মতো কাজগুলো এই ধরণের রোবটের সাহায্যে করা হয়। এদের গতিবিধি সুনির্দিষ্ট করা থাকে।
২. অটোমেটেড গাইডেড ভেহিকল
-
রেডিও ওয়েভ , চাকার সাহায্যে মার্ক করা লাইন, লেজার কিংবা ম্যাগনেটকে
অনুসরণ করে নিখুতভাবে চলাচল করতে পারে অটোমেটেড গাইডেড ভেহিকল রোবট। শিল্পকারখানায়
এর ব্যবহার ব্যপক। ভারী মালামাল ওঠানামা, স্থানান্তর ও পরিবহণেও এই রোবট ব্যবহার হয়।
সমতল জায়গাতে এই রোবটগুলো খুব সুন্দরভাবে চলাচল করতে পারে।
৩. আর্টিকুলেটেড রোবট
-
শিল্পক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত রোবটগুলোর মধ্যে আর্টিকুলেটেড রোবট
অন্যতম। শিল্পক্ষেত্রে আর্টিকুলেটেড রোবট এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশী। এই রোবটে একাধিক
জয়েন্ট থাকার কারনে এটি উপর-নিচ বা চতুর্দিকে ঘুরতে পারে। এ কারনে এটি ভারী জিনিস তুলতে
বেশি কার্যকরী।
৪. হিউম্যানয়েড -
মানবদেহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করে যে রোবটগুলো তৈরী করা হয়েছে তা
হচ্ছে হিউম্যানয়েড। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যুক্ত করা
হয়। এদের মাঝে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ইনষ্টল থাকার কারনে এরা নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে
ও কথা বলতে পারে। মানুষের আচরণ হুবহু নকল করার
পাশাপাশি তারা আবেগও প্রকাশ করে। হিউম্যানয়েড রোবটের কথা বললে আমাদের প্রথমেই মনে পড়ে
‘সোফিয়া’র কথা।
৫. কোবট -
এই রোবটগুলো মানুষের সাথে মিলে একত্রে কাজ সম্পাদন করতে পারে। কোবট
আকারে ছোট ও কম গতি সম্পন্ন হওয়ায় মানুষের পাশাপাশি থেকে এই রোবটের সাহায্যে কাজ করা
নিরাপদ। বিশেষ সেন্সর যুক্ত থাকায় অনিরাপদ স্পর্শ বা সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে পারে কোবট।
৬. হাইব্রিড -
কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে একাধিক ভিন্ন ধরণের রোবট একসাথে যুক্ত
করে নতুন একটি রোবট তৈরী করলে, সেটিকে হাইব্রিড রোবট বলা হয়। যেমন- অটোনমাস মোবাইল
রোবটের সাথে আর্টিকুলেটেড রোবটের জয়েন্টযুক্ত রোবটিক হাত সংযুক্ত করলে , এর কার্জ ক্ষমতা
দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।
রোবট এর ব্যবহার -
বর্তমানে বিশ্বের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার হচ্ছে রোবট ও
রোবটিক্স। তার মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ক্ষেত্র নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
শিল্পক্ষেত্রে -
শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যপক হারে ব্যবহার হচ্ছে
রোবট। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ঝুকিপূর্ণ কাজে শ্রমিকদের প্রানহানি অঙ্গহানি বা
প্রানহানি হ্রাস পাচ্ছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে -
আয়ারল্যান্ডের একদল চিকিৎসক রোবটের মাধ্যমে মস্তিষ্কের সফল অস্ত্রোপচার
করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। হাসপাতালগুলো ডাক্তার ও নার্সদের সরঞ্জামাদি বহন করতেও
রোবটের ব্যবহার হচ্ছে। রোবটিক হাত-পা সংযোজন
করে অঙ্গহানিদের মুখে হাসি ফটছে।
কৃষিক্ষেত্রে -
কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নেও রোবট অবদান রাখছে। মাটি বিশ্লেষণ থেকে শুরু
করে বীজ বপন, আগাছা পরিষ্কার ও ফসল সংগ্রহসহ কৃষি সংক্রান্ত নানা কাজে রোবট ব্যবহৃত
হচ্ছে।
সামরিকক্ষেত্রে -
যুদ্ধ ও সামরিকক্ষেত্রেও রোবটিক্সের অত্যাধুনিক আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য
ভূমিকা রাখছে। তার মাঝে মাইন অপসারন ও বোমা
নিষ্ক্রিয়করণ রোবট, ড্রোন, চালকহীন রোবট বিমান উল্লেখযোগ্য ।
রোবটের অসুবিধা সমূহ -
রোবট মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করলেও এর নানা অসুবিধাও রয়েছে। রোবট ও রোবট তৈরীর কাচামাল
এর দাম মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। তাই রোবট তৈরী ও রক্ষনাবেক্ষন ব্যয়বহুল।
যে সকল রোবটে কৃর্ত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত নেই সে সকল রোবটের কোন
সৃজনশীলতা নেই, তাই তারা ভুল করলেও বুঝতে পারে না।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোবট এর ব্যবহারের ফলে বিশ্বজুড়ে প্রচুর মানুষ
কর্মশূন্য হচ্ছে। মানুষের মতো রোবট পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে না, যতক্ষণ না
তার প্রোগ্রামে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হয়।
শেষ কথা -
রোবট এর ব্যপক বিস্তার এর ফলে তা মানুষের কর্মশূন্যতা তৈরী করছে।
মানুষের কর্মের পদগুলো দখল করে নিচ্ছে রোবট। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে রোবট এর
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাকে যতই উন্নত করা হউক না কেন তা কখনই মানুষের বিকল্প হতে পারবে
না। রোবট কর্মক্ষেত্রে মানুষের সহায়ক হয়েই থাকবে।
পোস্ট ট্যাগ -
রোবট এর কাজ কি , রোবটিক্স এর বৈশিষ্ট্য , রোবটিক্স এর জনক কে
, রোবটিক্স এর সুবিধা ও অসুবিধা , রোবটিক্স বলতে কি বুঝায় , রোবটিক্স কি বাংলা , রোবটিক্স
এর গুরুত্ব , রোবোটিক্স এর ইতিহাস