কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে কৃষকদের জন্য লাভবান হওয়ার
সুযোগ তৈরী করল এগ্রিভল্টাইক্স প্রযুক্তি।
এ প্রযুক্তির সহায়তায় একসাথে পানি, বিদ্যুৎ ও শস্য উৎপাদন করা সম্ভব। সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের
মাধ্যমে খরার মওসুমেও চাষযোগ্য জমিতে ফসল উৎপাদনের সুযোগ নিয়ে এসেছে
এই এগ্রিভল্টাইক্স প্রযুক্তি।
এগ্রিভল্টাইক্স
প্রযুক্তি কি?
এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা ব্যবহার করে কৃষিযোগ্য জমির
উপর সোলার প্যানেল বসিয়ে সেখান থেকে একইসাথে পরিবেশ-বান্ধব বিদ্যুৎ ও কৃষিপণ্য উৎপাদন
করা সম্ভব।
এগ্রিভল্টাইক্স
স্থাপনের উপায় কি ?
শুষ্ক মওসুমে যখন নদী নালা, খাল বিল শুকিয়ে যায় তখন আবাদি
জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য প্রচুর বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। পানির সংকট ও বিদ্যুত খরচ এসব
সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এই বিশেষ ধরনের এগ্রিভল্টাইক্স
প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এ প্রযুক্তিতে ভূমি হতে কয়েক মিটার উঁচুতে বিশেষ পদ্ধতিতে
সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়। ফলে সোলার প্যানেলের নিচের জমিতে নির্বিঘ্নে কৃষিকাজ
করা যায়। এই বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃষ্টির পানিও সংরক্ষণ করা সম্ভব।
ফসলের উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কম হয় এই এগ্রিভল্টাইক্স প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে।
এ পদ্ধতিতে পদ্ধতিতে উৎপাদিত শস্যাদি দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায় বিধায় অপচয় কম হয়।
পরিবেশ বান্ধব
পদ্ধতি : -
বিশিষ্ট গবেষক ড. র্যান্ডেল-বগিস বলেন "এগ্রিভল্টাইক
প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তুলনামূলক কার্বন কম তৈরি হয়। এ পদ্ধতিতে একইসাথে বিদ্যুৎ
ও কৃষি উৎপাদন করা সম্ভব হওয়ায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনায় এই বিশেষ পদ্ধতি
পরিবেশ বান্ধব।
সামাজিক উন্নয়ন:
-
সাধারণ মানুষ তাদের কোন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুকি তৈরী না
করেই বেশি বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে ফলে ধোঁয়াবিহীন সাশ্রয়ী ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করতে
পারবে।
কৃষকদের ক্লান্তি
কাটাতে ছায়াদান : -
কৃষি জমির উপর সোলার প্যানেল বসানোর কারণে কৃষকরা তাদের
কাজের ফাকে ছায়াতে বসে স্বস্থির বিশ্রাম নিতে পারবেন। এ বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে
কৃষকরা অধিক সময় একাধারে কায়িক পরিশ্রম করতে পারেন।
মানুষ ও প্রাণীর
জন্য উপযোগী পরিবেশ : -
ড. র্যান্ডল-বগিসের গবেষণা মতে, কৃষি জমির উপর সোলার
প্যানেল স্থাপনের ফলে প্যানেলের নিচে যে ছায়া পড়ে সেখানে মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও
শস্যের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়। ছায়া থাকায় সেখানে তাপমাত্রা কম থাকে ফলে জলীয়
বাষ্প কম হওয়ায় মাটি ভেজা থাকে। যখন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম থাকে সেই সময়েও চাষাবাদের
জন্য কৃষকদের পানি কম প্রয়োজন হয়।
এগ্রিভল্টাইক্সের
পদ্ধতির উপকারিতা : -
এগ্রিভল্টাইক্স প্রযুক্তির উপকারিতা হলো -
১) পানি
২) বিদ্যুৎ
৩) খাদ্য উৎপাদন
পানির সংকট সমাধান
: -
বর্তমানে বিশ্বে ৩০০ কোটিরও অধিক মানুষ কৃষি ভিত্তিক
জীবনযাপন করেন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার তথ্যানুযায়ী এমনটির জানা যায়।
দিন দিন পানির সংকট বৃদ্ধি পাওয়ায় তা সংরক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়ছে। এ সকল সমস্যার সমাধানে
এগ্রিভল্টাইক্স প্রযুক্তি অত্যন্ত কার্যকর ও সময়োপযোগী।
শস্যের উন্নত
ফলন : -
বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক ইউ-রং লিয়াং এর মতে এগ্রিভল্টাইক্স
প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে -
১) ছায়ায় মিশ্র জাতের ফল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
২) বিভিন্ন প্রজাতির
শস্যের উদপাদন করা যাচ্ছে।
৩) চা উৎপাদনে সন্তোষজনক ফলাফল।
৪) চা গাছ সরাসরি সূর্যের আলো থেকে রক্ষা পাওয়ায় চায়ের
মান উন্নত ও চা গাছ দ্রুত বেড়ে উঠে।
৫) সোলার লাইট ব্যবহার করলে তুলা ও টমেটোর উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পায়।
উন্নত বিশ্বে
এগ্রিভলটাইক্সের ব্যবহার : -
আমেরিকা , ইউরোপ,
জাপান , দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোতে এগ্রিভল্টাইক্স প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য
ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শেষ কথা : -
বিশ্বের সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এগ্রিভল্টাইক এর সর্বোচ্চ
ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশের অধিকাংশ জমিতে শস্য
উদপাদন করে কৃষি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এই প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে প্রযোজনীয়
কার্যকরী পদক্ষেপ গহন করা প্রয়োজন।
পোস্ট ট্যাগ
-
প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদনকে বেগবান করে ব্যাখ্যা কর , কৃষি
প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি , কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার , আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নাম
, উপজাতীয়দের শস্য উৎপাদন পদ্ধতি , সময়ের সাথে এলাকার মানুষের উৎপাদন পদ্ধতি ও প্রকৃতির
প্রভাব নির্ণয় , কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ৫টি উপায় , মানুষের উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তন