তারাবীহ শব্দটি আরবি: تَرَاوِيْحِ একবচন 'তারবীহাতুন', تَروِيْحَة এর আভিধানিক অর্থ হলো বিশ্রাম করা বা আরাম করা। এই শব্দটি আরবি ر و ح শব্দমূল থেক নেওয়া হয়েছে। তারাবীহ বা কিয়ামুল লাইল হলো রাতের এক বিশেষ নামাজ যা যা বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা রমজান মাসে আদায় করে থাকেন।
তারাবীহ যেকোনো জোড় সংখ্যক রাকআত পড়া হয়। তারাবীহ সালাত আদায় করার পর বিতর সালাত পড়া হয়। তারাবিহ সালাতের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ইমামগণের ভিন্ন মত রয়েছে। হানাফি মাযহাব এর অনুসারীগণ ২০ রাকাত, মালিকি মাযহাবের অনুসারীগণ ৩৬ রাকাত এবং আহলে হাদীস অনুসারীরা ৮ রাকাত তারাবীর নামাজ পড়েন।
তারাবীহ নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ " .
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমাযান মাসে ঈমানের সাথে ও একান্ত আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে তারাবীহ পড়ে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবিহ নামাজকে সুন্নাত করেছি। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয় । নাসায়ি, পৃষ্ঠা নং-: ২৩৯
বোখারীর অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। বুখারি, হাদিস নং-: ৩৬
তারাবীহ নামাজের রাকাত সংখ্যা-
তারাবিহ সালাতের রাকাত সংখ্যায় মতভেদ রয়েছে।
৮ রাকাত-
সালাফি ও আহলুল হাদিস এর অনুসারীগণ ৮ রাকাত তারাবীহের আমল করে থাকেন। ৮ রাকআত তারাবিহ এর পক্ষে নিম্নোক্ত হাদিস:
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللهِ فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي
আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রাহমান (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রা:)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রমাযানে আল্লাহর রাসূল(﷽)এর সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, রমাযান মাসে ও রমাযান মাস ব্যতীত অন্য মাসে কিয়ামুল লাইল ১১ রাক‘আত এর বেশি পড়তেন না।
তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি চার রাক‘আত পড়েন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর তিন রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আমি [‘আয়িশাহ (রাযি.)] বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন? তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্! আমার দু’চোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কলব নিদ্রাভিভূত হয় না।
অনেক আলেমের মতে হাদিসটি তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত। তবে সালাফিদের ভাষ্যমতে এ হাদিসটি তারাবীহের হাদিস বিধায় ইমাম বুখারি "তারাবীহের সালাত অধ্যায়ে" এনেছেন। সকল প্রকাশনীর বুখারিতেই অধ্যায়ের নাম উপস্থিত থাকলেও, ভারতীয় (দেওবন্দি) ছাপা বুখারিতে তা উল্লেখ নেই।
আরব বিশ্বের সকল বুখারি ও তার ব্যাখ্যা গ্রন্থেও অধ্যায়ের নামটি রয়েছে (যেমন: ফাতহুল বারী)। এছাড়াও উক্ত "হাদিসে বিতরের সালাতকেও ১১ রাকাতের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি এটা তাহাজ্জুদ সালাত ধরা হয় তাহলে এটা কীভাবে এক রাতে রাসুল (সা.) দুইবার বিতর পড়বেন?"
২০ রাকাত-
হানাফি মাযহাবের অনুসারীগণ ২০ রাকাত তারাবীহ আদায় করে থাকেন। তাদের মতে খলিফা উমর (রা:) তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত এর প্রচলন করেন। তাদের দলিল:
عُمَرَ أَمَرَ أَبَيًّا أَنْ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ فِي رَمَضَانَ فَقَالَ إِنَّ النَّاسَ يَصُوْمُوْنَ النَّهَارِ وَلَا يُحْسِنُوْنَ أَنْ يَقْرَؤُا فَلَوْ قَرَأْتَ الْقُرْآنَ عَلَيْهِمْ بِاللَّيْلِ فَقَالَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ هَذَا شَيْءٌ لَمْ يَكُنْ فَقَالَ قَدْ عَلِمْتُ وَلَكِنَّهُ أَحْسَنُ فَصَلَّى بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَة: إِسْنَادُهُ حَسَنٌ.
উমর (রা:) উবাই ইবনে কাব (রা:) কে রমজানে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে আদেশ করে বলেন, লোকেরা দিনের বেলায় সিয়াম পালন করে। কিন্তু সুন্দর করে কোরআন পড়তে জানে না। তুমি রাতে তাদের নিয়ে কুরআন পড়বে।
তিনি বললেন হে আমিরুল মুমিনীন এটা তো আগে হয়নি। উমর (র.) বললেন জানি তবে উত্তম। তারপর তিনি তাদের নিয়ে ২০ রাকাত পড়লেন। -আল আহাদীসুল মুখতারাহ, হাদিস নং-:১১৬১।
এই হাদীসটিকে ইমাম মাকদিসি হাসান বলেছেন।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন ,
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ
তোমরা আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নাত অবশ্যই অবলম্বন করবে, তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরবে।
সে জন্য হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ ২০ রাকাআত তারাবীহ আদায় করেন।
পোস্ট ট্যাগ -
মুসলিমদের প্রধান ইবাদাত , বিতর নামাজ , ঈশার পরের নামাজ , তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের , তারাবির নামাজের নিয়ম ও দোয়া সমূহ , তারাবির নামাজের দোয়া , তারাবির নামাজের মোনাজাত , তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া , তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল , তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ , বেতের নামাজের নিয়ম