প্রত্যেকটি পবিত্র সম্পর্কই মহান আল্লাহর একটি বিশেষ নেয়ামত।
সম্পর্কের ধরন প্রধানত ২টি।
১। রক্তের সম্পর্ক ।
২। বৈবাহিক সম্পর্ক ।
এর বাইরেও আমাদের নানারকম সম্পর্ক রয়েছে, যেমন - বন্ধুত্বের সম্পর্ক, সামাজিক সম্পর্ক ইত্যাদি।
১। রক্তের সম্পর্ক -
রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়ের পরিধি নির্ধারণে আলেমদের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়।
প্রথম মত: মাহরাম শ্রেণীর সকল আত্মীয়ই হচ্ছে রক্ত সর্ম্পকীয় আত্মীয়।
দ্বিতীয় মত: উত্তরাধিকারীগণ হলো রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়।
তৃতীয় মত: উত্তরাধিকারী হোক কিংবা বা না হোক বংশগত আত্মীয়রাই হলো রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়।
আলেমগণের মতামতগুলোর মধ্যে তৃতীয় মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ বংশীয় আত্মীয়গণ হলো রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়। বাবা অথবা মা, যার দিক থেকেই আত্মীয় হোক না কেন। তবে এ ক্ষেত্রে দুগ্ধপানের দিক থেকে আত্মীয়রা এর আওতাভুক্ত নয়।
২। বৈবাহিক সম্পর্ক -
নারী ও পুরুষের মাঝে বিবাহের মাধ্যমে যে সম্পর্ক তৈরি হয় তাই বৈবাহিক সম্পর্ক। দুজন মানুষের এই বন্ধনের মাধ্যমে দুইটি পরিবারে একটি মেলবন্ধন তৈরি হয়। নতুন কিছু সম্পর্ক তৈরী হওয়ার পাশাপাশি আত্মীয়তার পরিধি বৃদ্ধি পায়।
স্ত্রীর আত্মীয়দের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্ত্রীর পরিবারের প্রতি সাধ্যমত সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।
অন্যান্য সাধারন সম্পর্ক -
উপরে উল্লেখিত সম্পর্ক ২টির বাইরেও সাধারণ কিছু সম্পর্ক রয়েছে। যেমন বন্ধুত্বের সম্পর্ক, পরিচিতজনদের সাথে সম্পর্ক, প্রতিবেশীদের সম্পর্ক ইত্যাদি।
প্রত্যেকটি সম্পর্ক যদি সুসম্পর্কে পরিণত হয়, তাহলে জীবনকে কি স্বর্গীয় মনে হয়। সম্পর্কের মাঝে যদি কোন ক্রোধ , হিংসা, ঈর্ষা, লোভ না থাকে, তাহলে প্রত্যেকটি সম্পর্ক আমাদের জীবনকে ভালোভাবে চালিত করতে সাহায্য করবে।
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর ব্যাপারে হাদিসে এসেছে,
জুবায়ের ইবন মুত্বইম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না”।
আমাদের পারিবারিক, দাম্পত্য, সামাজিক ও বন্ধুত্বসহ যেকোনো একটি সম্পর্ক নষ্ট করতে তৃতীয় পক্ষের আগমন ঘটে। এরা সর্বদায়, স্বামী - স্ত্রীর, ভাই - বোনের এমনকি বাবা, মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক নষ্ট করতেও বেশ পটু। ঈদের ধ্যান, জ্ঞান সর্বদায় এক দিকেই থাকে যে, কিভাবে আরেক জনের সংসারে আগুন লাগানো যায়।
তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি আমাদেরকে কিভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তার কিছু বাস্তব চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো -
প্রেক্ষাপট - ১:
উচ্চ পদে ভালো মাইনেতে চাকুরি করা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলো,
- আপনি কোথায় চাকুরি করেন?
- আমি একটা কোম্পানিতে চাকুরী করি।
- অপনার স্যালারি কতো?
- ১০,০০০ টাকা।
- দশ হাজার টাকা স্যালারিতে আপনি চলেন কিভাবে? বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি। এই অবস্থায় এ বেতনে কাজ করার চেয়ে বেকার থাকা অনেক ভালো। অপনার বস আপনার সাথে অবিচার করছে। আপনার যে যোগ্যতা, তাতে আপনি চাইলে হেসে খেলেই অনেক টাকা বেতনের চাকুরী পেতে পারেন।
ভদ্রলোকের মেজাজ বিগড়ে গেলো। নিজের কর্ম ও বসের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে বসকে সরাসরি বেতন বাড়ানোর কথা জানালেন। বসের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বস তাকে চাকরিচ্যুত করলেন। এখন সেই ব্যক্তি বেকার জীবন যাপন করছেন!
প্রেক্ষাপট - ২:
- খুব ভালোবেসে কাছে বসে ভদ্র মহিলা বলছেন, তোমার প্রথম সন্তান হলো বুঝি?
- হ্যাঁ।
- তোমার স্বামী এ উপলক্ষ্যে তোমাকে কি উপহার দিয়েছে? টাকা বা অন্য কিছু?
- না। কেন দিতে হবে? এতো আমাদেরই সন্তান! উপহার বা টাকা- পয়সা দিতে হবে কেন?
- তোমাকে হাত খরচের জন্যেও তো দু’চার পয়সা দিতে পারতো?। তার কাছে কি তোমার একেবারেই মূল্য নেই? তুমি চাকরানি নাকি?
- স্ত্রীর মনে লাগলো কথাগুলো। সারাদিন তার মাথায় কথাগুলো ঘুরপাক খেতে লাগলো। ভাবতে ভাবতে তার মনটা বিষিয়ে উঠলো। সত্যিই তো! আমাকে তো কখনো একটা টাকাও দেয় না! রাতে স্বামী ক্লান্ত শরীরে ঘরে ঢুকার সাথে সাথেই স্ত্রীর মুখ দিয়ে বোমা বিস্ফোরিত হতে লাগলো। দুজনেই রাগান্বিত হয়ে গেলো। তারপর দুজনের কথা কাটাকাটি ঝগড়া আর ঝগড়া। তারপর শুরু হলো হাতাহাতি। অবশেষে পরিস্থিতি এক পর্যায়ে বিচ্ছেদ এ রূপ নিলো !
প্রেক্ষাপট -৩:
- চাচা এই বৃদ্ধ বয়েসে আপনারা কষ্ট করছেন? অপনার ছেলেতো ঢাকায় থেকে বড় চাকুরি করে শুনেছি। বড় ফ্ল্যাটে বউ-বাচ্চা নিয়ে আয়েশী জীবন যাপন করে। আপনাদের দু’জনকে কি সাথে রাখতে পারে না? আপনাদেরকে তো দেখতেও তো আসেনা কোনো সময় !
- না না, ছেলে আমার খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রতি মাসে সময়মত টাকা পাঠায় তো। এছাড়াও নিয়মিত ফোনেও খোঁজ-খবর নেয়।
- আপনার ছেলের কী এমন ব্যস্ততা শুনি? নিজের বাবা - মা কে দেখতে আসার সময় হয়না তার?
- সারাদিন ছেলের অফিসেই সবটা সময় চলে যায় স্ত্রী সন্তানদেরও ঠিকমতো সময় দিতে পারে না !
- আপনি আপনার ছেলের খোঁজ নিয়েছেন তো? সে তো ঢাকায় গাড়ি - বাড়ি বানিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করছে। আর আপনারা এই বয়সে অজপাড়াগাঁয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন?
- বৃদ্ধ বাবা স্ত্রীকে সব কথা খুলে বললো। স্ত্রীও বাধা দিল।
- আপনি যা শুনেছেন তা ভুল। সে আসলেই ব্যস্ত সময় পার করছে।
- নাহ, তাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। সে কি আমাকে মিথ্যা বলতে পারে?
- আহা রে! আমি কাকে আমার শরীরের রক্ত পানি করে বড় করলাম। এটা ভেবেই হার্ট অ্যাটাক করলেন !
মূল কথা:
কিছু অযাচিত প্রশ্ন আমাদের জীবনকে মুহুর্তের মধ্যেই দুঃখী করে তুলতে পারে। আমাদের সমাজের ছদ্মবেশী দরদীরা সর্বদায় নিরন্তর চেষ্টা করে আমাদের জীবনে অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে দেয়। ছদ্মবেশী এই শয়`তানগুলো তার নিজের থেকে আপনাকে কিছুই দিবেনা। কিন্তু কিভাবে আপনি অন্যের থেকে অবৈধভাবে আদায় করবেন তার পদ্ধতি শিখিয়ে আপনাকে জিতিয়ে দেয়ার আড়ালে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। দাবানল ছড়িয়ে দিবে আপনার জীবনে।
শেষ কথা:
জীবনে কখনই ৩য় ব্যক্তি কে আপনাদের সম্পর্কের মাঝে প্রবেশ করার সুযোগ দেবেন না। আর যদি কখনও আপনার কাছের বন্ধুর রূপে কোন ভাবে ঢুকেও যায়, তাহলে কখনও তার কথা কানে তুলবেন না। ৩য় ব্যক্তি হতে সবসময় সাবধান থাকুন।
পোস্ট ট্যাগ -
তৃতীয় ব্যক্তি প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ কেন? , তৃতীয় ব্যক্তি সর্বজ্ঞ কেন কার্যকর? , তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির উদ্দেশ্য কি? , কিভাবে তৃতীয় ব্যক্তি একটি গল্প প্রভাবিত করে? , সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি নিয়ে উক্তি , ভালবাসায় তৃতীয় ব্যক্তি , তৃতীয় ব্যক্তি নিয়ে ক্যাপশন , বাস্তব জীবনে ভালো লাগার ছোট ছোট টিপস , সম্পর্ক নষ্ট নিয়ে উক্তি