পুষ্টিবিদদের এক বিশেষ গবেষণায় জানা গেছে, টানা ৩০ দিন চিনিমুক্ত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হলে আপনি নানা উপকার পেতে পারেন। আজকের আর্টিকেলে চিনিমুক্ত জীবনযাপনের নানা উপকারিতার বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কোনো না কোনোভাবে চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার থাকেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনি অ্যালকোহল ও তামাকের মতোই আসক্তিকর। আমাদের রক্তে চিনি সরাসরি মিশে যাওয়ায় তা অতি উচ্চ মাত্রার ফ্রুকটোজ তৈরি করে বিধায় নেশা তৈরি হয়। গবেষণা মতে প্রমাণিত, মানবদেহে অতিরিক্ত চিনির উপস্থিতি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই চিনিকে ‘হোয়াইট পয়জন’ বা সাদা বিষ নামে আখ্যায়িত করা হয়। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বেশি চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার থাকলে শরীর ক্লান্ত লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে, চিন্তাশক্তি কমতে শুরু করে ও শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে শুরু করে।
কী হবে ৩০ দিন চিনি না খেলে?
টানা ১ মাস বা ৩০ দিন চিনি বা চিনিজাতীয় খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার ফলে হজমের সমস্যা, নিদ্রাহীনতা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, কুষ্ঠকাঠিন্ন ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। এ ছাড়াও শারীরিক নানা সমস্যায় আশ্চর্যজনক উপকারিতা পাবেন। টানা ৩০ দিন চিনিমুক্ত থাকলে আপনার শরীরের ইতিবাচক প্রভাবগুলি ধাপে ধাপে বুঝতে পারবেন। নিম্নে ইতিবাচক প্রভাবের ধাপগুলো তুলে ধরা হলো -
প্রথম ধাপ:
১-৩য় দিন প্রথম ধাপের এই তিনটি দিন সবচেয়ে কঠিন। কারণ, এই ধাপে আপনার শরীরকে চিনি মুক্ত রাখতে অভ্যস্ত করাতে হবে। যেকোনো ‘নেশাদ্রব্য’ হঠাৎ করেই বন্ধ করে দিলে আমাদের শরীরে এর বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। তাই, এ সময় মাথাব্যথা, পেট ব্যথাসহ নানা সমস্যার পাশাপাশি ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তাই চিন্তার কিছু নেই। এ সময় আমাদের শরীর হতে জমা থাকা চিনির ক্ষতিকর উপাদানগুলো নিষ্কাশনের কাজ শুরু করবে।
দ্বিতীয় ধাপ:
৪-৭ম দিন দ্বিতীয় ধাপের এই চার দিনে মনোযোগ ও শক্তি বৃদ্ধি হয়। এ সময় আপনার হারিয়ে যাওয়া শারীরিক শক্তি ও কাজে মনোযোগ ফিরে পেতে শুরু করবেন। ৭ম দিনে নিজেকে আগের তুলনায় শক্তিশালী মনে হবে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
তৃতীয় ধাপ:
৮-১০ম দিন তৃতীয় ধাপের এই তিন দিনে আমাদের শরীর চিনিমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পাচনতন্ত্র দারুণভাবে কাজ করতে শুরু করবে। এ প্রক্রিয়াটি ৮ম দিন থেকেই শুরু হবে। এ সময় ভারসাম্য খুঁজে পেতে শুরু করে আমাদের অন্ত্রের microbiome (মাইক্রোবায়োম) । ফলে আমাদের পেটের ফোলাভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্যান্য acidity এর সমস্যা কমতে শুরু করে।
চতুর্থ ধাপ:
১১-১৪তম দিন চতুর্থ ধাপের এই চার দিনে আমাদের ক্ষুধা কমে যায় এবং ঘুমের উন্নতি হয়। দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকেই আপনার মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ কমতে শুরু করবে। এই ধাপে আপনার নিদ্রাহীনতা দূর হওয়ার পাশাপাশি ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকতে।
চিনিবিহীন থাকার দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা কী?
৩০ দিনের চিনিমুক্ত জীবন আপনাকে দীর্ঘমেয়াদি কিছু জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে। যেমন - হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি ও রক্তে শর্করার মাত্রা থাকবে স্থিতিশীল। মানবদেহে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে নানা জটিলতা দেখা দেয়, যেমন - কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, কিডনির সমস্যা, চোখের সমস্যা এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
খাদ্য তালিকা থেকে চিনি বাদ দিলে আপনার ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো হবে, এছাড়াও ব্রণ ও একজিমা কমার পাশাপাশি অকালবার্ধক্য রোধে কাজ শুরু করে।
পোস্ট ট্যাগ -
চিনি খেলে কি মোটা হওয়া যায়? , চিনি কম খেলে কি হয়? , চিনির অপকারিতা কি কি? , চিনি কেন খাবেন না? , স্বাস্থ্য টিপস পরামর্শ , প্রতিদিনের স্বাস্থ্য টিপস , স্বাস্থ্য টিপস ছবি, চিনি খেলে কি হয় , দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় , রক্তে শর্করা কমে গেলে কি হয় , ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা , চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা , ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার উপায়